অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

 ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই উক্তিটি—"অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই"—তার সামাজিক উদ্যোগ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মূলমন্ত্র এবং তার কাজের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উক্তির মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরিবর্তন বা প্রকল্পের সফলতার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূসের জীবনের বিভিন্ন দিক এবং তাঁর কাজের মাধ্যমে এই দর্শনটি কিভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনের একটি পরিচিতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার জন্য বরাবরই তাঁর লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়ন।

গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা

ড. ইউনূসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৬ সালে, তিনি একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেন, যা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের রূপ নেয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান এবং তাদের স্বাবলম্বী করা। গ্রামীণ ব্যাংক কোনো প্রকার জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করে, যা ঐতিহ্যগত ব্যাংকিং সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিপ্লবী পদক্ষেপ।

"অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই" দর্শনের প্রভাব

এই উক্তিটি ড. ইউনূসের কাজের মূল দর্শন এবং নীতির একটি সুষম প্রতিফলন। নিম্নলিখিত দিকগুলোতে এই দর্শনের প্রভাব স্পষ্ট:

  1. সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে ইউনূসের ভূমিকা: ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন যে, সামাজিক পরিবর্তন শুরু হলে শুধুমাত্র পরিকল্পনা ও উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বরং বাস্তবায়নে প্রবাহিত হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সমাজের সমর্থন অর্জন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলটি এমনই একটি উদ্যোগ, যেখানে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েই সমর্থন এবং স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

  2. দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকরী পদক্ষেপ: "অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই" দর্শনের আলোকে, ড. ইউনূস দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বাস্তবায়নে সমর্থনের জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সমাজের বিভিন্ন অংশগ্রহণকারীদের সমর্থন গ্রহণ করেছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একটি সফল উদ্যোগের জন্য শুধুমাত্র একটি ভালো আইডিয়া নয়, বরং সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য সামগ্রিক সমর্থন প্রয়োজন।

  3. মাইক্রোক্রেডিট মডেলের প্রসার: গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর, মাইক্রোক্রেডিট মডেল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ড. ইউনূসের এই দর্শন বিশ্বজুড়ে সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করেছে। নানা দেশে মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম গড়ে উঠেছে এবং এই প্রোগ্রামগুলোর সফল বাস্তবায়নে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ

সাফল্য:

  1. দারিদ্র্য বিমোচন: গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর, হাজার হাজার দরিদ্র পরিবার ঋণ নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেছে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং অন্যান্য দেশেও এই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে।

  2. নারী ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষভাবে নারীদের লক্ষ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে। এই উদ্যোগ নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করেছে।

চ্যালেঞ্জ:

  1. ঋণ পুনঃপরিশোধের সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হয়। উচ্চ সুদের হার এবং ঋণের পরিমাণের কারণে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

  2. নেতৃত্বের পরিবর্তন: গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জও মাঝে মাঝে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এগুলো সামাজিক পরিবর্তন এবং কার্যকরী পদক্ষেপের বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার

ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে শান্তির নোবেল পুরস্কার লাভ করে। নোবেল কমিটি তাদেরকে "অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন উপায় তৈরি করার জন্য" এই পুরস্কার প্রদান করে। এই স্বীকৃতি ড. ইউনূসের কাজের আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন এবং তাঁর দর্শনের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।

সামাজিক উদ্যোক্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. ইউনূস বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ এবং প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনারে বক্তৃতা দেন এবং নতুন উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে সামাজিক উদ্যোক্তা উদ্যোগের প্রসার এবং বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত।

উপসংহার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উক্তি—"অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই"—তার সামাজিক উদ্যোগ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মৌলিক দর্শনকে প্রতিনিধিত্ব করে। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কোনো সামাজিক পরিবর্তনের সফল বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সমর্থন প্রয়োজন। ড. ইউনূসের কাজের মাধ্যমে, তিনি দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক ক্ষমতায়ন, এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তার দর্শন এবং উদ্যোগ ভবিষ্যতেও সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Comments

Popular posts from this blog

Alpilean

6 life span examples from a 93-year-old competitor who is pretty much as solid as somebody many years more youthful, as per science

Consuming More Plant Protein May Aid Healthier Aging In Women